ব্রঙ্কোস্কোপি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের কনসালটেন্ট, পালমোনোলজিস্ট, চিকিৎসক দেবরাজ যশ।
অতিমারি পরবর্তী সময়ে আমূল বদল গিয়েছে চিকিৎসাজগত। রোগ নির্ণয়ে ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে এসেছে বেশ কিছু বদল। এর মধ্যে একটি হল ব্রঙ্কোস্কোপি। প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতিটি বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যানসার সনাক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হত। তবে সময় বদলেছে। বর্তমানে এই পদ্ধতিটির অন্যান্য ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছেন বহু মানুষ। যদিও আরও অনেকগুলি চিকিৎসা পদ্ধতির মতোই, ব্রঙ্কোস্কোপি নিয়ে এখনও বহু ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেট হোক বা চিকিৎসকের চেম্বার, প্রশ্ন রয়েছে অনেক। যেমন, ব্রঙ্কোস্কোপি কি বেদনাদায়ক? এর জন্য কি অ্যানেস্থেসিয়ার প্রয়োজন রয়েছে? ব্রঙ্কোস্কোপির পরে কোনও রোগীর সেরে উঠতে কত দিন সময় লাগে? এমনই আরও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল, কলকাতার, কনসালটেন্ট, পালমোনোলজিস্ট, চিকিৎসক দেবরাজ যশ।
একটি প্রশ্ন বহু মানুষের মনেই ঘোরাঘুরি করে— যে ব্রঙ্কোস্কোপি কী ভাবে কাজ করে? ব্রঙ্কোস্কোপি হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রোগীর ফুসফুস এবং বায়ুপথ পরীক্ষা করা হয়। যদিও এখনও অনেকেই মনে করেন, এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র ক্যানসার সনাক্তকরণেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক দেবরাজ যশ জানাচ্ছেন, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ব্রঙ্কোস্কোপি ফুসফুসের রোগ নির্ণয়েও সাহায্য করে। অতিমারির সময়ে করোনায় আক্রান্ত বহু রোগীর ক্ষেত্রেই ফুসফুসে তৈরি হওয়া জটিলতা পরীক্ষা করতে এই পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। একইভাবে, অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার করা যেতে পারে।
অন্যান্য কোন পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা যেতে পারে? উত্তরে চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এর বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। অনেক সময়ে যক্ষ্মা রোগীরা কাশির সময় দীর্ঘস্থায়ী জ্বর এবং থুথুর সঙ্গে রক্তক্ষরণের অভিযোগ করেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগীর থুথু পরীক্ষা করলে সব সময় টিবির জন্য ইতিবাচক ফলাফল দেয় না। অনেক ক্ষেত্রে ব্রঙ্কোস্কোপি ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। একইভাবে, এই পদ্ধতিটি কোনও রোগীকে পরীক্ষা করতে এবং ক্যান্সারের রোগ সনাক্ত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্রঙ্কোস্কোপি ছাড়াও, চিকিৎসক আরও একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন, যেটি হল থোরাকোস্কোপি বা প্লুরোস্কোপি। ফুসফুসের বাইরে থাকা বুকের গহ্বটি পরীক্ষা করার সময়ে পালমোনোলজিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যে সমস্ত রোগীদের বুকের গহ্বরে তরল জমা হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়, সেই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বিশেষভাবে সহায়ক। সংশ্লিষ্ট গহ্বর থেকে তরল নিষ্কাশণ করে একটি বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে ভবিষ্যতে সেই তরল তৈরি হতে পারে না। নিষ্কাশিত তরলটিকে বায়োপসির জন্যও পাঠানো হয় যার এর উৎসের আসল কারণগুলি সনাক্ত করা যায়।
এ পর্যন্ত আমরা রোগ নির্ণয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্রঙ্কোস্কোপির কথা বলছি। তবে এটি চিকিৎসার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, চিকিৎসক দেবরাজ যশ বেলুন প্রসারণ বা শ্বাসনালী স্টেন্ট সন্নিবেশ হিসাবে পরিচিত বেশ কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করেন। যে সব রোগীদের শ্বাসনালী শক্ত হয়ে যাওয়া বা সংকোচন হওয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয় (এটি এমন একটি অবস্থা যা সাধারণত ক্যানসার রোগীদের মধ্যে দেখা যায়), সেই রোগীদের ক্ষেত্রে একটি স্টেন্ট বা বেলুন প্রসারণের মাধ্যমে এয়ার প্যাসেজ তৈরি করে, স্বস্তি প্রদান করা হয়।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, তাঁর কাছে আসে রোগীদের মধ্যে প্রায়শই একটি বিশেষ বিষয় লক্ষ্য করা যায়। যা হল ভীতি বা আশঙ্কা। অনেকেই ভাবেই ব্রঙ্কোস্কোপির সময় অ্যানেস্থেসিয়ার প্রয়োজন হয়। এই কথা সত্যি নয়। ব্রঙ্কোস্কোপি পদ্ধতিটি কোনও আক্রমণাত্মক বা বিপজ্জনক নয়। ব্রঙ্কোস্কোপি করার সময় রোগীদের অল্প আচ্ছন্ন করার জন্য একটি ওষুধ দেয়। কোনও ব্যথা বা অস্বস্তি হয় না। পুনরায় ফলো-আপ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বহু রোগী ব্যতা বা জটিলতার ভয় পান। অথচ পরিসংখ্যান বলছে মাত্র ১ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। এ ছাড়াও ক্যানসার রোগীরা বা তাঁদের পরিবার আরও একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকে। তা হল এই পদ্ধতিতে ক্যানসার আরও ছড়াতে পারে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই ভয় অযৌক্তিক। কারণ এমন ঘটনা এখনও পর্যন্ত ঘটেনি বা দেখা যায়নি।
সর্বোপরি, ব্রঙ্কোস্কোপি বা থোরাকোস্কোপি উভয়ই নিরাপদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই পদ্ধতিগুলি আরও উন্নত হচ্ছে। অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল পালমোনোলজি বিভাগে চিকিৎসকেরা সর্বদাই আপনাকে সাহায্য করার প্রস্তুত।
এটি একটি স্পনসর্ড প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনটি অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।
Leave A Comment